লিনাক্স কেন ব্যবহার করবেন

রাজীব চৌধুরী 3 ৮:০৪ PM

এন্টিভাইরাস লাগে না


লিনাক্স কার্নেলেই চূড়ান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া প্রত্যেকটি লিনাক্স ডিস্ট্রোতে ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা এবং প্রাইভেসি কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। ভাইরাস নির্মাতারাও তাই লিনাক্সের জন্য ভাইরাস তৈরীতে আগ্রহী হয় না। তাই ভাইরাস, ম্যালওয়্যার, ট্রজান, রুটকীট, বটনেট, স্পাইওয়্যার ইত্যাদির অস্তিত্ব লিনাক্সের জগতে এলিয়েনের মত। তবে লিনাক্সের জন্য পরীক্ষার নিরীক্ষার উদ্দেশ্যে এখনো পর্যন্ত মাত্র ৪৮ টি ম্যালওয়্যার তৈরি করা হয়েছে যেগুলো ব্যবহারকারী পাসওয়ার্ড দিলেই এক্সিকিউট করবে।
অপরদিকে উইন্ডোজের আছে মিলিয়ন মিলিয়ন ভাইরাস যেগুলো দিনে দিনে বাড়ছে। তাই এন্টিভাইরাস ছাড়া উইন্ডোজ কল্পনাও করা যায় না। উইন্ডােজের দুর্বল সিকিউরিটির উপর ভিত্তি করেই এসব এন্টিভাইরাস কোম্পানি ব্যবসা করে যাচ্ছে।


হার্ডওয়্যার কম্প্যাটিবিলিটি




Windows 7/8/10 আসার পরও দীর্ঘসময় ধরে অনেকেই Windows XP তেই পরে আছে তার মূল কারণ হল হার্ডওয়্যার কম্প্যাটিবিলিটি। Windows 7/8/10 ভালমত ব্যবহার করতে উন্নত কনফিগারেশনের হার্ডওয়্যার লাগে। পুরানো মডেলের মাদারবোর্ড ও প্রসেসর হলে অনেক সময় চালানোও যায় না। আরো লাগে ন্যূনতম ১ জিবি র‌্যাম। অপরদিকে লিনাক্সের লেটেস্ট ডিস্ট্রো চালাতে ন্যূনতম ৭০০ মেগাহাটর্জ প্রসেসর, ৫১২ মেগাবাইট র‌্যাম, ৫ জিবি হার্ডডিস্ক স্পেস, ভিজিএ স্ক্রীন রেজুলেশন, ডিভিডি ড্রাইভ অথবা ইউএসবি পোর্ট থাকলেই চলে।

গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস
 

যদি আপনার ভুল ধারনা থেকে থাকে যে লিনাক্স একটি টেক্সট বেজড অপারেটিং সিস্টেম এবং এটি চালাতে টার্মিনালে কমান্ড লিখতে হয় তাহলে চিত্রগুলো দেখুনঃ








 
লিনাক্স ডেস্কটপ এত সুন্দরভাবে সাজানো থাকে যে মাউস ব্যবহার করতে জানলেই এটি চালানো যায়।


বিল্ট ইন ড্রাইভার

লিনাক্স কার্নেলেই বেশিরভাগ হার্ডওয়্যারের ড্রাইভার বিল্ট ইন থাকে। তাই কোন হার্ডওয়্যার লাগালে সেটার জন্য আলাদা করে ড্রাইভার ইন্সটলের প্রয়োজন হয় না। তাই উইন্ডােজের মত ড্রাইভার সফট্ওয়্যার হারিয়ে গেলে সেটা খোঁজা নিয়েও কোন সমস্যায় পড়তে হয় না।

সফট্ওয়্যার রিপোজিটরি


লিনাক্সের সফট্ওয়্যার গুলো উইন্ডোজের মত এখান থেকে ওখান থেকে খুঁজে খুঁজে ডাউনলোড করতে হয় না। লিনাক্সের সব সফট্ওয়্যার এক জায়গাতেই থাকে যার নাম সফট্ওয়্যার রিপোজিটরি বা সফট্ওয়্যার সেন্টার। এখানে প্রত্যেকটি সফট্ওয়্যার ডেভেলপাররা টেস্ট করে তারপর আপলোড করে থাকে। এটা অনেকটা গুগল প্লে স্টোরের মত। শুধু পছন্দের সফট্ওয়্যারটি সার্চ করে ইন্সটল নাও বাটনে ক্লিক করলেই সেটা ডাউনলোড হয়ে ইন্সটল হয়ে যাবে।

সহজ আপডেটিং প্রসেস

লিনাক্স আপডেট দেওয়া শুধু একটি ক্লিকের ব্যাপার। লিনাক্স আপডেটে শুধু সিস্টেম আর সিকিউরিটি নয় বরং যেসব সফট্ওয়্যার আপনি ইন্সটল করেছেন সেসব সফট্ওয়্যারও অন্তর্ভুক্ত থাকে। লিনাক্সে শাটডাউন এবং রিস্টার্টের সময় আপডেট ইন্সটল হয় না তাই আপনি আপডেটে ক্লিক করে নিজের কাজ করতে পারবেন। উইন্ডোজে আপডেটের মত চূড়ান্ত ধৈর্য পরীক্ষা দিতে হবে না।

কমিউনিটি সার্পোট


লিনাক্সের সবচাইতে ভাল ব্যাপারটি হচ্ছে লিনাক্স কমিউনিটি। লিনাক্সের দুনিয়ায় আপনি কখনো একলা বোধ করবেন না। লিনাক্সের ব্যবহারকারীদের জন্য আছে অসংখ্য ব্লগ ও ফোরাম যেখানে একজন সমস্যায় পরলে দশ জন এগিয়ে আসে তাকে সাহায্য করার জন্য। এই কমিউনিটি গুলো এখন এতই সমৃদ্ধ যে বেশিরভাগ সমস্যার সমাধানই এখানে আছে।

স্বাধীনতা


এটাই লিনাক্স ব্যবহারকারীদের সবচাইতে বড় সুবিধা। লিনাক্স ব্যবহারকারীদের আছে বহু সংখ্যক অপশন যেখান থেকে নিজের পছন্দমত ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট, সফট্ওয়্যার এমনকি সম্পূর্ণ অপারেটিং সিস্টেমটাই বেছে নেওয়ার সুযোগ আছে। শুধু তাই নয় সেই অপারেটিং সিস্টেমকে আবার নিজের প্রয়োজন মতো মোডিফাই করে নেওয়া যায়। এমনকি বিশেষ কোন হার্ডওয়্যারের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য লিনাক্স কার্নেলকেও পরিবর্তন করে ফেলা যায়। নিজের অপারেটিং সিস্টেম নিজে তৈরি করে নেওয়ার মত স্বাধীনতা একমাত্র লিনাক্সই দেয়।

প্রাইভেসি

 
লিনাক্স ডেভেলপাররা এর ব্যবহারকারীদের প্রাইভেসিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখে। উইন্ডোজের মত ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে না। উইন্ডোজ ৮ এবং উইন্ডোজ ১০ এ এমন সিস্টেম আছে যাতে আপনি কি কি সফট্ওয়্যার ইন্সটল করেছেন, কতক্ষন ধরে সেগুলো ব্যবহার করেছেন, কোন কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করেছেন ইত্যাদি তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাইক্রোসফটের কাছে চলে যায়। তবে আপনি প্রাইভেসি সেটিংসে গিয়ে এগুলো বন্ধ করতে পারেন কিন্তু মাইক্রোসফটের এসব নোংরা মানসিকতা তো আর বন্ধ করতে পারবেন না। Windows 10 আপনাকে তাদের বিভিন্ন প্রোডাক্ট ও সার্ভিসে যুক্ত করার চেষ্টা করবে। তাদের ইকো সিস্টেম, করটানা, ওয়ান ড্রাইভ, অফিস স্যুট ইত্যাদি যেন আপনি ব্যবহার করেন সে ব্যাপারে জোর চেষ্টা চালাবে। লিনাক্সে এসব কিছুই হবে না কারণ আপনার প্রাইভেসির গুরুত্ব সবচাইতে বেশি।

সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাওয়া যায়

লিনাক্স সম্পূর্ণ ফ্রি। এটার কার্নেলও ফ্রি। এটার সফট্ওয়্যার গুলোও ফ্রি। আর লিনাক্স দিয়ে বানানো ডিস্ট্রো গুলোও ফ্রি। ফ্রি ফ্রি ফ্রি। এগুলো সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে নিতে হয়। এটাই আসলে লিনাক্সের এক নম্বর সুবিধা। তারপরও এটা সবার শেষে লেখার কারন লেটেস্ট লিনাক্স ডিস্ট্রেগুলো সাইজ ১ জিবির উপরে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো ১ জিবি ইন্টারনেটের মূল্য উইন্ডোজের পাইরেটেড ডিভিডির চাইতেও বেশি।





 



 

3 মন্তব্য(গুলি)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.